ডামর তন্ত্রের অধিশ্বরী হলেন দেবী ডামরী। ডামরী শব্দের অর্থ হল বীভৎস বা ভয়ঙ্কর কিছু। কিন্ত বীভৎস বা ভয়ঙ্কর মানেই কিন্ত পিশাচিনী বা রাক্ষসী বা কোনও অপশক্তি নয়। দেবী চামুণ্ডাও অতি ভয়ঙ্করী ও শুষ্কমাংসাতিভৈরবা কিন্ত তাই বলে কি তিনি অপশক্তি ? না কখনওই নয়। দেবী ডামরীও ঠিক তাই। দেবীকে তন্ত্রে বারংবার মহাশক্তি হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ভগবান মহেশ্বরের যে গণেরা রয়েছেন তাদের অন্যতম হল ডামর এবং এই ডামরের শক্তি হলেন ডামরী। এই গণসমূহ হলেন পীঠরক্ষক ভৈরব। শ্রীবিদ্যাক্রমে দেবী ললিতা ত্রিপুরাসুন্দরীর লাকিনী দেবীর আবরণবিদ্যার অন্তর্গত হলেন দেবী ডামরী। দেবী লাকিনী আমাদের দেহের মণিপুর চক্রের অধিশ্বরী। আমরা দৈহিক বল দিয়ে যে সকল কাজ সমাধা করি সকল করি দেবী লাকিনী ও তাঁর আবরণ শক্তির সাহায্যে। সেই অর্থে দেবী লাকিনীর আবরণবিদ্যার অন্তর্গত দেবী ডামরীর বাস এই শরীরেই। ললিতা সহস্রনামে বলা হয়েছে ‘ ‘ডার্ময্যাদি ভীরাবৃতা’, যার অর্থ হল ডামরী শক্তি দ্বারা দেবী ললিতা পরিবৃতা এবং এই ডামরী এক নন বহুধা ৷
তবে সকলেই কিন্ত অপশক্তি বা রাক্ষসী বা পিশাচিনী নন। দেবী ডামরীর সঙ্গে দেবী মাতঙ্গীর কোনও সংযোগ আদতেই নেই তিনি একজন স্বতন্ত্র মহাশক্তি বরং দেবী ললিতাত্রিপুরাসুন্দরীর সহিত দেবীর যোগসূত্র রয়েছে। যোগিনীচক্রের মূলদেশের অধিপতি কূলেশ্বর ভৈরবের আবরণের অন্তর্গত ষষ্ঠীযোগিনীগণের অন্যতমা হলেন দেবী ডামরী। ইনি দেহের মাংস ও মজ্জাতে অবস্থানকারিনী। ইনি কোথাও যোগিনী আবার কোথাও ডাকিনী নামে খ্যাতা হলেও তিনি কখনোই অপশক্তি নন।
তিনি অতি উচ্চমার্গের দেবী এবং অবশ্যই সাধককে আশাতীত সিদ্ধিপ্রদান করে থাকেন। তবে অবশ্যই উপযুক্ত গুরুর সান্নিধ্য ছাড়া দেবীর সাধনা সম্ভবপর নয়। আমাদের সকল ভাব বা বোধশক্তি সকল কিছুর মূলে থাকেন দেবী ডামরী। আমাদের দেহে অবস্থিত ভুবনাধ্বনি নামক স্থানে সকল ভাব রসবোধ আদির উদ্ভব হয় যার মূলে রয়েছেন এই ডামরী শক্তি। কুব্জিকাতন্ত্র মতে দেবী ডামরী অষ্টাদশভূজা মহাশক্তি আবার কুলার্ণব তন্ত্র মতে তিনি দ্বিভূজা মহাবিদ্যা। কুব্জিকাতন্ত্র মতে দেবীর আনন শকুনসদৃশ ,দীর্ঘনাসিকাযুক্ত ও নানা অস্ত্রে দেবী সুশোভিতা। ইনি সর্বদা অসুর তথা অশুভশক্তি বধে তৎপর এবং সদা মদ্য ও মাংস ভক্ষনকারিনী। আগমশাস্ত্র অনুসারে ষড়াঙ্গন্যাসের ষড় অঙ্গের প্রথম অঙ্গ হৃদয়ই হল দেবী ডামরীর আবাসস্থল এবং সেখানে বসবাস করে তিনি আমাদের সকল ভাব তথা গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে কিছু গল্পে এইসব দেব-দেবীদের নিয়ে নানা মনগড়া কথা লেখকরা লিখে থাকেন ৷ দেবীকে যেভাবে নিকৃষ্টতম পিশাচিনী হিসাবে দেখানো হয় সেখানে তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও লজ্জাজনক। এক অপার মহাশক্তির অপমান ছাড়া কিছুই নয়। মাতৃকানির্ণয় তন্ত্রমতে ইনি ‘ড’ অক্ষরের মাতৃকাশক্তি ও মহাডামরী নামে পরিচিতা। মালিনী বিজয়গ্রন্থের চতুর্দশ মহাবিদ্যাগণের অন্যতমাও হলেন দেবী ডামরী। মন্থনভৈরবতন্ত্র মতে ইনি অন্যতমা মহাশক্তি। ইনি নবাত্মনভৈরবের লীলাবিলাসের সঙ্গিনী তথা নাদপীঠের অধিষ্ঠাত্রী। দেবী দুর্গার অষ্টোত্তর শতনামেও দেবীকে ডামরতন্ত্রের অধিশ্বরী ডামরী নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তিনি অশুভশক্তি নন তিনি অশুভশক্তির বিনাশকারিনী শুভ শক্তির প্রতিনিধিত্বকারিনী মাতৃকা শক্তি।